এখনও পাশের বাড়ির থেকে শাঁখ আর উলুর আওয়াজ আসছে ।পিউ-এর বিয়ে হয়ে গেল কিংশুকের সাথে ।কিংশুক নাম করা ডাক্তার ।পিউ যথেষ্ট সুন্দরী ।অরুনাভ বোঝে সব ।তবু আজকের দিনে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ।কোন ছোট্টবেলা থেকে পিউ আর অরুনাভ-এর প্রেম ।সবাই জানতো, ওদের বিয়ে হবেই ।সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো আজ পিউ-এর সাথে কিংশুকের বদলে অরুনাভ-এর বিয়ে হত ।কিন্তু…………
অন্ধকার ছাদে একলা বসে আছে অরুনাভ ।ওদের ছাদ আর পিউ-দের ছাদ লাগোয়া ।সেই কোন আমলে কাঠের সেতু তৈরি করেছিল অরুনাভ ছাদে ছাদে ওবাড়ি যাওয়ার জন্য, আজও সেই সেতুটা রয়ে গেছে ।শুধু মাত্র অরুনাভ – এর ওবাড়ি যাওয়ার কারণটাই নষ্ট হয়ে গেছে ।পিউ যখন চায় না, কেন যাবে অরুনাভ!!
গত বছর পিউ – এর জন্মদিন ছিল সেদিন ।অরুনাভ বাড়ি ফিরত ওর জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছর এই সময়ে ।গত বছরও তেমনই এসেছিল ।ওই জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি রেখেছিল ।ইচ্ছে ছিল ওই দিন এনগেজমেন্ট রিং-টা দেবে পিউ-কে।সবাই চলে গেছিল পার্টি জন্য বুক করা হোটেলের হলে ।পিউ তখনও রেডি নয় ।কথা ছিল, অরুনাভকে ফোন করলে এসে নিয়ে যাবে ।সেই মতোই চলছিল সব ।পিউ – এর ফোন পেয়েই অরুনাভ বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল ।রাস্তায় ছোট্ট বেলার বন্ধু পরাগ – এর সাথে দেখা হয়ে গেছিল ।ওর সাথে কথা বলতে গিয়ে বেশ কিছুটা সময় দেরী হয়ে গিয়েছিল ।যখন এসে পৌঁছেছিল তখন পিউ-এর ঘর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা আকাশ ছুঁতে চাইছে ।লোকজন জল নিয়ে ছোটাছুটি করছে ।
পিউ ভেতরে – এটা বোঝা মাত্র নিজের জীবনের কথা না ভেবে অরুনাভ ভেতরে ঢুকে যায় পিউ – কে বাঁচাতে । তারপরের ঘটনার জন্যই প্রস্তুত ছিল না অরুনাভ ।পিউ – কে বাঁচাতে গিয়ে সেদিন নিজের শরীরের কিছু অংশ সাথে মুখের বাঁ-দিকটা পুড়ে গিয়েছিল ওর ।হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল ।পিউ একবারও দেখতে যায় নি ।বাড়ি ফিরেই ছুটে গিয়েছিল পিউ-এর কাছে ।কিন্তু পিউ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, অরুনাভ —এর কুৎসিত চেহারা নাকি সে সহ্য করতে পারছে না ।মাথা নিচু করে ফিরে এসেছিল অরুনাভ ।
পিউ-এর বিয়ে জানলে এখন বাড়ি আসত না ।প্রতি বছরের অভ্যাস মত এই সময়টাতে ফিরেছিল ।যাক, ভালো থাকুক ভালোবাসা ।কখন যে চোখের জল গাল বেয়ে নেমে এসেছে বুঝতেও পারে নি অরুনাভ ।যার স্পর্শে চমক ভাঙল অরুনাভ-এর সে আর কেউ না, মৌ-পিউ এর বোন ।অরুনাভ – এর মাথাটা বুকে শক্ত করে চেপে ধরে মৌ।অরুনাভ বোঝে এর অর্থ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না ।সঁপে দেয় নিজেকে মৌ – এর কাছে ।
কিছু ক্ষণ পর যখন মৌ – এর চোখে চোখ রাখে অরুনাভ, দেখে জলে ভেজা দু’চোখে নিষ্পাপ ভালোবাসা – খুঁজে পায় আশ্রয় ।শুভ দৃষ্টি হয় দু’টি নিষ্পাপ হৃদয়ের ।পাশের বাড়ি থেকে তখনও শাঁখ আর উলুর আওয়াজ ভেসে আসছে ।